পুরাণকথা : রত্নবর্ষণ মন্ত্রের গল্প

পুরাণকথা : রত্নবর্ষণ মন্ত্রের গল্প

কাফি রশিদ, ২৮/০৫/১৩

রাজা ব্রহ্মদত্তের সময়কার কথা। তার রাজ্য বারাণসীর এক ব্রাহ্মণ বিশেষ এক মন্ত্র জানতেন। মন্ত্রের বৈশিষ্ট্য হলো, বিশেষ একটি নক্ষত্র আকাশে দ্যাখা গ্যালে মন্ত্রপাঠ করে আকাশপানে তাকালে তৎক্ষণাৎ রত্নবর্ষণ হতো। বোধিসত্ত্ব নামে ব্রাহ্মণের এক শিষ্য ছিলো। একদিন বোধিসত্ত্বকে সাথে করে ব্রাহ্মণ দেশান্তরে যাবার বেলায় পথিমধ্যে পাঁচশো প্রেষণক দস্যুর হাতে বন্দী হলেন। দস্যুদের এই বিশেষ নামের তাৎপর্য হলো, এরা দুইজনকে বন্দী করলে একজনকে নিষ্ক্রয়, অর্থাৎ মুক্তিপণ আনতে পাঠাত। নিষ্ক্রয় থেকে প্রেষণক। প্রথা অনুযায়ী দস্যুদল ব্রাহ্মণকে আটকে রেখে বোধিসত্ত্বকে পাঠালো মুক্তিপণ আনতে। যাবার আগে বোধিসত্ত্ব গুরুকে বলে গ্যালো সে য্যানো উল্টাপাল্টা কিছু না করে চুপচাপ বসে থাকেন, আজ রত্নবর্ষণের যোগ আছে, সে দুইদিন পর ঠিকঠিক মুক্তিপণ নিয়ে ফিরে আসবে। সাথে সাবধান করে গ্যালো গুরু যদি নিজেই রত্নবর্ষণ ঘটান তাহলে সবাই মারা পড়বে। 

শিষ্য চলে গ্যালে ব্রাহ্মণ ভাবলেন খামোখা দুইদিন বসে থাকার মানে হয় না। তাই সে নিজেই রত্নবর্ষণ করে মুক্তি পেতে চান। এদিকে সন্ধ্যে হয়ে এসেছে, পূর্নিমার চাঁদ উঁকিবুকি মারছে। ব্রাহ্মণ দস্যুদের কাছে প্রস্তাব করলেন তাকে য্যানো স্নান করিয়ে নববস্ত্র পরিয়ে গন্ধরাজ পরিবেষ্টন করে বসতে দেয়া হয়, তাহলে সে দস্যুদের মূখ্য উদ্দেশ্য সাধন করতে পারবে, অর্থাৎ ধনসম্পদ এনে দিতে পারবেন। দস্যুদলও ভাবলো দুইদিন অযথা বসে থাকার মানে হয় না। তাই ব্রাহ্মণের কথামতোন কাজ করা হলো। ব্রাহ্মণ তখন মন্ত্র জপে আকাশপানে তাকিয়ে রত্নবর্ষণ ঘটালেন। দস্যুদল বোধিসত্ত্বকে গালাগাল করে ব্রাহ্মণকে মুক্তি দিয়ে দিলো। 

হয়তো মন্ত্রের অপব্যবহারে অথবা বোধিসত্ত্বের ভবিষ্যদ্বাণী হিশেবে সেই প্রেষণক দস্যুদল আরও পাঁচশো দস্যু দ্বারা বন্দী হলো, তাদেরও রত্ন চাই। প্রেষণক দস্যুদল ব্রাহ্মণকে দেখিয়ে দিলে ব্রাহ্মণ নতুন দস্যুদলকে জানালেন এক বছর আগে রত্নবর্ষণ ঘটানো যাবে না। রেগেমেগে নতুন দস্যুদল ব্রাহ্মণের গলা কেটে ফেললো, আর প্রেষণক দস্যুদলকে আক্রমণ করে বসলো। নতুন দস্যুদল জয়ী হলো। তাদের মধ্যে আবার দুইটি দলের উদ্ভব হলো। যথারীতি বেশি রত্নলাভের উদ্দেশ্যে তারা মারামারি করে একজন আরেকজনকে মেরেকেটে রত্নের পাহাড়ের পাশে লাশের পর্বত গড়ে ফেললো। 

শেষ পর্যন্ত দ্যাখা গ্যালো দুইজন অবশিষ্ট আছে। এদিকে সকাল হয়ে এসেছে, একজন রত্ন পাহারায় বসে আরেকজনকে পাঠালো খাবার নিয়ে আসতে। যে দস্যু খাবার আনতে গ্যালো সে ভাবলো খামোখা রত্ন দুইভাগ করার কী দরকার, সে পেটপুরে খেয়ে বিষ মেশানো ভাত নিয়ে যাবে। ওদিকে যে রত্ন পাহারায় ছিলো সে ভাবলো অন্যজন ভাত নিয়ে আসা মাত্র গলায় তরবারি চালিয়ে দেবে। খামোখা রত্ন দুইভাগ করার কী দরকার। যথারীতি দ্বিতীয় দস্যু ভাত নিয়ে আসামাত্র তার গলা নামিয়ে দেয়া হলো, রত্ন বয়ে যাবার শক্তি যোগার করতে পাহারাদার দস্যু ভাত খেয়ে নিলে দুজনই লাশের পর্বতের অংশ হয়ে গ্যালো।