গ্রীক ডেমি-গড পার্সিউসের মেডুসা বধ ও প্রণয়কাহিনী

গ্রীক ডেমি-গড পার্সিউসের মেডুসা বধ ও প্রণয়কাহিনী
কাফি রশিদ, ১/১১/১২

আর্গসের রাজা অ্যাক্রিসিউসের একমাত্র কন্যা ড্যানি ছিলেন রাজ্যের সবচে সুন্দরী নারী। রাজা অ্যাক্রিসিউসের কোন ছেলে সন্তান না থাকায় তার মনে শান্তি ছিলো না। তিনি কোনদিন পুত্রসন্তানের জনক হবেন কিনা জানতে একদিন ডেলফি’র মন্দিরে গেলেন। সেখানে গিয়ে তার মনের কথা জিজ্ঞেস করতে সেখানকার পুরোহিতানী না-সূচক উত্তর দিলেন। শুধু তাই-ই না, আরো ভয়ংকর কিছু কথা বললেন যার মধ্যে একটা ছিলো তার কন্যা ড্যানি অ্যামন এক পুত্রসন্তানের মা হবে যেই পুত্র অ্যাক্রিসিউসকে হত্যা করবে। এই নির্মম পরিণতি থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় ছিলো ড্যানিকে হত্যা করা, কিন্তু অ্যাক্রিসিউস তা করতে পারলেন না। পিতৃস্নেহ তার প্রগাঢ় ছিলো না, তার ছিলো দেবতাদের উপর অত্যাধিক ভয়। নিকটাত্মীয়দের যারা হত্যা করতো তাদের দেবতারা ভয়ানক শাস্তি দিতেন, অ্যাক্রিসিউস তাই কোন দুঃসাহস দেখালেন না। তবে বিকল্প উপায় খুঁজে বের করলেন। অ্যাক্রিসিউসের ছিলো এক ব্রোঞ্জ নির্মিত ভূগর্ভস্থ এক বাড়ি, যার ছাদের একাংশ দিয়ে আলো-বাতাস প্রবেশ করতো। সেখানে ড্যানিকে আটকে রেখে বাইরেও পাহারার ব্যবস্থা করলেন।

আকাশপানে চেয়ে ড্যানি সেখানে রাত-দিন পার করতেন। উপরের খোলা অংশ দিয়ে আকাশের মেঘ ছাড়া অন্য কিছু দেখার উপায় ছিলো না। একদিন এক রহস্যময় ঘটনা ঘটলো। ছাদের খোলা অংশ দিয়ে নেমে এলো সোনালী বৃষ্টিধারা। সেই সোনালী বৃষ্টিতে স্নাত হলো তার ঘর। বৃষ্টির রুপ ধরে এসেছিলেন দেবতা জিউস। বহুদিন ধরেই ড্যানির উপর নজর রাখছিলেন জিউস। বহুগামী জিউস ইতোমধ্যেই ড্যানির প্রেমে পরেছিলেন। স্বরুপে আবির্ভূত হয়ে সেই বদ্ধ ঘরে উন্মত্ততায় মেতে উঠলেন দুইজন। নিজ গর্ভে জিউসের সন্তান ধারণ করলেন ড্যানি।


পার্সিউস, হাতে মেডুসা’র মাথা।

একদিন সন্তান ভূমিষ্ঠ হলো, ড্যানি সন্তানের নাম রাখলেন পার্সিউস। ব্রোঞ্জ নির্মিত সেই ছোট ঘরে সন্তানকে লুকিয়ে রাখা সহজ ছিলো না, একদিন ধরা পরেই গেলেন অ্যাক্রিসিউসের কাছে। ক্রোধান্বিত অ্যাক্রিসিউস তার পিতা সম্পর্কে জানতে চাইলে ড্যানি জানালেন জিউসের কথা। ক্ষোভ, রাগ, অবিশ্বাস আর ভয়ে ক্রোধান্বিত অ্যাক্রিসিউস তক্ষুনি চাইলেন দুইজনকে হত্যা করতে। কিন্তু আগে যেখানে ড্যানিকে হত্যা করতে পারেননি দেবতাদের ভয়ে, সেখানে দেবতা-রাজের সন্তানকে কীভাবে হত্যা করবেন। তাই নিজ হাতে তাদের হত্যা না করে পরোক্ষভাবে তাদের ঠেলে দিলেন মৃত্যুর দিকে। পার্সিউস ও ড্যানিকে বিরাট এক সিন্দুকে পুরে ভাসিয়ে দিলেন সমুদ্রে।

সেই সিন্দুকে ছেলেকে কোলে নিয়ে বসে রইলেন ড্যানি। সারা রাত ধরে এভাবেই কাটালেন। সিন্দুকের ফাঁকা দিয়ে যখন দেখলেন ভোর হয়ে গেছে, তখন আশেপাশে কোন দ্বীপের প্রতীক্ষা করতে লাগলেন। নিয়তি অথবা জিউস – যেকোন একজনের ইচ্ছায় ডিকটিস নামের এক জেলে খুঁজে পেলেন তাদের। সিন্দুক খুলে তাদের দেখতে পেয়ে নিঃসন্তান ডিকটিস তাদের বাসায় নিয়ে গেলেন। ডিকটিসের স্ত্রীও ছিলেন ডিকটিসের মতোই মহৎ। তারা অ্যামনভাবে ড্যানি ও পার্সিউসের সেবা-যত্ন করলেন য্যানো তারা তাদেরই কোন আপনজন। ড্যানি ও পার্সিউস সেখানেই থাকলেন অনেক বছর। বালক পার্সিউসকে ডিকটিসের সাথে কাজে পাঠিয়ে সন্তুষ্ট থাকলেন ড্যানি। তবে বিপদ তাদের পিছু ছাড়লো না। তারা যেই দ্বীপে থাকতেন সেই দ্বীপের রাজা ছিলেন পলিডিকটিস, ডিকটিসের ভাই। তবে ডিকটিস য্যামন মহৎ ছিলেন পলিডিকটিস ছিলেন তার উল্টো। নিষ্ঠুর-নৃশংস পলিডিকটিস এতোদিন তাদের উপর নজর না রাখলেও অসাধারণ রূপবতী ড্যানি তার নজরে পরে গেলেন। পার্সিউস তখন প্রাপ্তবয়স্ক। ড্যানিকে চাইলেও পার্সিউসকে চাইলেন না পলিডিকটিস। তিনি তখন পার্সিউসকে সরানোর উপায় খুঁজতে থাকলেন। প্ল্যানমতো একসময় পার্সিউসের কাছে সাপের মাথা-অলা চুলের মেডুসা’র কথা তুললেন। এবং বললেন পৃথিবীর যদি কোন কিছু পার্সিউস চায় তবে তা হওয়া উচিৎ মেডুসা’র মাথা। ক্যানোনা মেডুসা’র মাথাই পার্সিউসকে বীরের মর্যাদা দিতে পারে। মেডুসাকে হত্যা করা ছিলো প্রায় অসম্ভব, কারণ চোখের দৃষ্টি দিয়ে যে কাউকে পাথরে পরিণত করতে পারতেন মেডুসা। একদিন পলিডিকটিস ঘোষণা করলেন তিনি বিয়ে করতে যাচ্ছেন। অন্যদের মতো পার্সিউসকেও নিমন্ত্রণ করলেন তিনি। বিয়েতে পার্সিউসের উপহার দেয়ার মতো কিছু ছিলো না। তাই তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন মেডুসাকে বধ করে তার মাথা বিয়েতে উপহার দিবেন।

বধের উদ্দেশ্যে বের হয়ে গেলেন পার্সিউস। তার পরিণতি অন্যদের মতো হয়নি, কারণ তিনি ছিলেন ডেমি-গড। তার উপর আরো দুইজন দেবতাও নজর রাখছিলেন। মেডুসা’র কাছে যাওয়ার আগে পার্সিউস সিদ্ধান্ত নিলেন তার মা ড্যানির সাথে দেখা না করার, কারণ পুত্রের অ্যামন সিদ্ধান্তের কথা জানতে পারলে তাকে কখনোই যেতে দিতেন না। দ্বীপ থেকে বের হয়ে এক জাহাজে চেপে বসলেন গ্রীসের উদ্দেশ্যে, ডেলফি’র মন্দির থেকে জেনে নিবেন মেডুসার অবস্থান। ডেলফির মন্দিরের নারী-পুরোহিতেরা জানালেন মেডুসা থাকেন অ্যামন এক জায়গায় যেখানে মানুষ দিমিতিরের সোনালী শস্য খায় না, কেবল ওক গাছের বীজ খেয়ে বেঁচে থাকে। কাজের পার্সিউস গেলেন ওকে গাছের দেশ ডোডোনা’তে – যেখানে ওক গাছ ঘোষণা করতো জিউসের ইচ্ছাকে, যেখানে বাস করতো ওকের ফল থেকে রুটি বানানো সেলিবৃন্দ। সেলিবৃন্দ তাকে মেডুসা সম্পর্কে বলতে পারলো না।

হতাশ পার্সিউস ইতস্তত ঘুরে বেড়াতে লাগলেন। একসময় তার সাথে দেখা হলো অদ্ভুত সুন্দর এক ব্যক্তির সাথে। সেই যুবক বহন করতেন ডানাযুক্ত এক স্বর্ণদন্ড, পায়ে ছিলো ডানাযুক্ত চপ্পল, মাথায় ডানাযুক্ত টুপি। তাকে দেখে খুশি হলেন পার্সিউস, ক্যানোনা তিনি জানতেন সেটি ছিলো হার্মিস – দেবতাদের বার্তাবাহক। হার্মিস পার্সিউসকে জানালেন মেডুসাকে হত্যা করতে চাইলে তাকে অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হতে হবে যেগুলো উত্তরের উপ-দেবীদের দখলে ছিলো। সেই উত্তরের উপ-দেবীদের কাছে যেতে হলে তাকে সাহায্য নিতে হবে ধূসর-রমণী তিন বোনের, কেবল তারাই উপ-দেবীদের অবস্থান সম্পর্কে বলতে পারবে। ধূসর-বোনেরা বাস করতো অ্যামন এক যায়গায় যেখানে সূর্যের আলো পৌছাতো না, এমনকি রাতে চাঁদের আলোও দেখা যেত না। তারা ছিলো প্রকৃতির এক অদ্ভুত সৃষ্টি – তাদের তিনজনের ছিলো একটিমাত্র চোখ। একটিমাত্র চোখ তারা ভাগাভাগি করে ব্যবহার করতো। হার্মিস পার্সিউসকে বললেন যে তিনি তাকে নিয়ে যাবেন ধূসর-বোনদের কাছে। তাকে বুদ্ধি দিলেন যখন একজন আরেকজনকে চোখ দিতে যাবে সেইসময় পার্সিউস য্যানো চোখ ছিনিয়ে নেয়। মেডুসাকে হত্যার জন্য হার্মিস একটি তরবারী উপহার দিলেন যেটি কখনোই বেঁকে যাবে না। এরপর তারা রউনা হলেন তাদের উদ্দেশ্যে। পথিমধ্যে পার্সিউসকে সাহায্য করতে এগিয়ে এলেন আরেক দেবী – প্যালাস অ্যাথেনা, তিনি তার বক্ষবর্মটি পার্সিউসকে উপহার হিশেবে দিয়ে বললেন মেডুসার দিকে সরাসরি না তাকিয়ে সেই চকচকে আয়নার মতো বর্মের দিকে তাকিয়ে দেখতে।

দীর্ঘযাত্রার পর তারা ধূসর-রমণীদের খুঁজে পেলেন। তারা দেখতে ছিলেন রাজহংসের মতন, মাথাটি কেবল মানুষের মতো। পার্সিউস সুযোগের অপেক্ষা করতে লাগলেন কখন একজন চোখ খুলে আরেকজনকে দিবে। সেই সময় চলে আসলো, একজন যখন আরেকজনকে দেয়ার জন্য চোখ খুললো, তখন পার্সিউস দৌড়ে গিয়ে চোখ ছিনিয়ে নিলেন। তারা তিনজনের প্রত্যেকেই ভাবলো যে তাদের কোন একজনের কাছে চোখটি আছে, তখন পার্সিউস বললেন চোখটি তার কাছে আছে, তিনি ফেরত দিবেন যদি তারা উত্তরের উপ-দেবীদের অবস্থান বলে দেয়। তিন বোন রাজি হলে চোখটি ফিরিয়ে দিলেন, তারপর জেনে নিলেন উত্তরের উপ-দেবীরা তখন বোরিয়ানদের দেশে। বোরিয়ানদের দেশ খুঁজে পাওয়া সহজ হতো না যদি না হার্মিস পার্সিউসের সাথে থাকতেন। বোরিয়ানরা ছিলো উৎসবপ্রিয় মানুষ, তারা হার্মিস ও পার্সিউসকে দেখে উৎসবে মেতে উঠে ভোজের আয়োজন করলো। তারপর নৃত্যানুষ্ঠানের এক ফাঁকে তাদের সামনে কাঙ্ক্ষিত উপহারসামগ্রী হাজির করলো। সেগুলো ছিলো ডানাযুক্ত চপ্পল, জাদুর ওয়ালেট আর জাদুর টুপি – যেটা পরলে অদৃশ্য হওয়া যেত। এগুলো আর অ্যাথেনার বর্ম, হার্মিসের তরবারি নিয়ে পার্সিউস মেডুসা বধের উদ্দেশ্যে বের হলেন।


উড়ে যাচ্ছেন পার্সিউস।

মেডুসারা ছিলেন তিন বোন। এদের মধ্যে মেডুসা ছাড়া বাকি দুই বোন ছিলেন অমর। ডানাযুক্ত চপ্পল পরে তারা যখন ওস্যান নদীর উপর দিয়ে ওড়ে মেডুসাদের দ্বীপে পৌছালেন, তখন মেডুসারা ছিলেন নিদ্রামগ্ন। হার্মিস দেখিয়ে দিলেন অমর বোনদের। পার্সিউস তার ডানাযুক্ত চপ্পলে ওড়ে অ্যাথেনার দেওয়া বর্মে মেডুসার প্রতিকৃতি দেখতে দেখতে হার্মিসের তরবারি দিয়ে মেডুসার গলা কেটে ফেললেন। তারপর উপহার পাওয়া ওয়ালেটে মেডুসার মাথা ঢুকিয়ে জাদুর টুপি পড়লেন য্যানো অন্য দুই বোন তাকে দেখতে না পায়।


বর্ম হাতে পার্সিউস, পিছনে মেডুসা।

মেডুসার মাথা নিয়ে তারা চলে এলেন ইথিউপিয়াতে, সেখানে হার্মিস ও অ্যাথেনা তাকে রেখে চলে গেলেন। ইথিউপিয়াতে পার্সিউস খুঁজে পেলেন অসম্ভব রূপবতী কুমারী অ্যান্ড্রোমিডা-কে, যাকে পর্বতের সামনে বেঁধে রাখা হয়েছিলো ভয়ংকর এক প্রাণীর জন্য। অ্যান্ড্রোমিডা ছিলেন বোকাটে আর আত্মাভিমানী এক রানী ক্যাসিওপিয়া’র কন্যা, যিনি নিজেকে নেরেউসের কন্যা নেরেউড পরীদের চেয়েও সুন্দরী মনে করতেন। দেবতাদের চেয়ে নিজেকে শ্রেষ্ঠ দাবী করার শাস্তি ক্যাসিওপিয়ার উপর বর্তালো না। শাস্তি বর্ষিত হলো ক্যাসিওপিয়া’র কন্যা অ্যান্ড্রোমিডা’র উপর। ইথিউপিয়ান জনগণ প্রায়ই সমুদ্রের এক অদ্ভুত প্রাণী সাপ আকৃতির সিটাসের গ্রাসের মুখে পরতো। এর থেকে রক্ষা পেতে অ্যান্ড্রোমিডাকে সমুদ্র-দেবতার উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করার আয়োজন চলছিলো। তাকে সমুদ্রের পাশে এক পর্বতের উপর বেঁধে রাখা হয়েছিলো – য্যানো সিটাস এসে তাকে নিয়ে যায়। পার্সিউস অ্যান্ড্রোমিডাকে উদ্ধার করার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলেন। যখন সেই প্রাণী আসলো তখন মেডুসাকে য্যামন করে বধ করেছিলেন, ত্যামন করে সিটাসের গলা কেটে ফেললেন। এরপর অ্যান্ড্রোমিডাকে উদ্ধার করে তার মা ক্যাসিওপিয়া ও তার বাবার কাছে নিয়ে গেলেন। তাদের কাছে তার কন্যার পাণি-প্রার্থনা করলে তারা হাসিমুখে তা মঞ্জুর করলেন।




সিটাসের থেকে অ্যান্ড্রোমিডাকে উদ্ধার করছেন পার্সিউস।

অ্যান্ড্রোমিডাকে নিয়ে পার্সিউস ফিরে এলেন তার নিজের দ্বীপে যেখানে তার মা ড্যানি আর ডিকটাস ও তার স্ত্রী বাস করতেন। গিয়ে জানতে পারলেন ডিকটাসের স্ত্রীর অনেক আগেই মৃত্যু হয়েছে, আর ডিকটাস ও ড্যানি পলিডিকটাসের হাত থেকে বাঁচতে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। পার্সিউসকে জানানো হলো তারা দুইজন এক মন্দিরে আশ্রয় নিয়েছে। আরো জানানো হলো পলিডিকটাস তার প্রাসাদে এক ভোজসভার আয়োজন করেছে। পার্সিউস মেডুসার মাথা যেই ওয়ালেটে ছিলো সেটা নিয়ে প্রাসাদে গিয়ে মেডুসার মাথা বের করে নিষ্ঠুর রাজা পলিডিকটাস ও তার অনুগত চরদেরকে পাথরে পরিণত করে ফেললেন। যখন দ্বীপবাসী জানতে পারলো তাদের অত্যাচারী রাজাকে হত্যা করেছে, তখন ড্যানি ও ডিকটাসকে তারাই খুঁজে বের করে দিলো। তারা ডিকটাসকে সেই দ্বীপের রাজা বানালেন।

কিন্তু ড্যানি আর পার্সিউস সেই দ্বীপে থাকতে চাইলেন না। তারা ঠিক করলেন অ্যান্ড্রোমিডাকে নিয়ে আর্গসে গিয়ে অ্যাক্রিসিউসের সাথে দেখা করার চেষ্টা করবেন এটা জানতে যে দীর্ঘদিন আগে তাদের ভাসিয়ে দেয়ার পর অ্যাক্রিসিউসের হৃদয় কোমল হয়েছে কিনা। কিন্তু যখন তারা আর্গসে ফিরে গেলেন তখন জানতে পারলেন যে অ্যাক্রিসিউসকে আর্গস থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে। তার খোঁজ কেউ জানাতে পারলো না। এদিকে উত্তরের রাজ্য ল্যারিসা’র রাজা এক বিশাল ক্রীড়া প্রতিযোগীতার আয়োজন করে ড্যানি, অ্যান্ড্রোমিডা ও পার্সিউসকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। সেখানে গিয়ে পার্সিউস চাকতি নিক্ষেপ প্রতিযোগীতায় অংশ নিলেন। যখন তার পালা আসলো তখন যেই চাকতি নিক্ষেপ করলেন, চাকতি দিক পরবর্তন করে দর্শকদের দিকে চলে গ্যালো। সেখানে চাকতির আঘাতে এক দর্শকের মৃত্যু হলো। কাছে গিয়ে দেখলেন সেই দর্শক আর কেউ ছিলো না, তিনি ছিলেন স্বয়ং অ্যাক্রিসিউস। এরপর মেডুসা’র মাথা উপহার হিশেবে অ্যাথেনাকে দেওয়া হলো, যা তিনি সবসময় জিউসের ঢালে যুক্ত করে রাখতেন।

যদিও পার্সিউসের মনে দুঃখ ছিলো যে তিনি তার মাতামহকে হত্যা করেছে, তবুও স্বান্তনার বিষয় এই ছিলো যে তার মাতামহ তাদের হত্যা করার চেষ্টা করেছিলো। এরপর অ্যান্ড্রোমিডা ও পার্সিউস টাইর‍্যানসে সুখে দিনাতিপাত করতে লাগলেন। পার্সিউস ও অ্যান্ড্রোমিডার ছিলো সাত পুত্র ও দুই কন্যা। তার এক পুত্র ইলেক্ট্রায়ন ছিলেন হারকিউলিসের পিতামহ। আরেক পুত্র পার্সেস ইথিপিয়াতে ফেরত গিয়ে পার্সিয়ান শাসনামলের সূচনা করেছিলেন।