কনফিউশন
কাফি রশিদ, ২৭/৬/১২
কাফি রশিদ, ২৭/৬/১২
হাবাগোবা
মানুষেরা সম্ভবত অল্পতেই কনফিউজড হয়ে পরে। এর অনুজ্জ্বল দৃষ্টান্ত আমি
নিজেই, প্রায় সব বিষয়ে কিভাবে য্যানো কনফিউজড হয়ে যাই। আমার জন্মের পর
প্রথম চারদিনের কথা কল্পনা করা যাক। যখন বিছানিষ্ঠ হলাম, মানে যাকে আমরা
ভূমিষ্ঠ হওয়া বলি আর কি, তখন আব্বুর হতাশার কথা শুনতে পেলাম। আব্বু বলছিলো,
“আগামী পঞ্চাশ বছরে তো বাংলাদেশের অর্ধেক সাগরে ডুবে যাবে, আমার ছেলেটা
কোথায় যে যাবে!”। নিশ্চয়ই সদ্য বিছানিষ্ঠ ছেলের কাছে এটা এক বিশাল ধাক্কা।
আম্মুর পেটে লিকুইডেই তো ভালো ছিলাম, এখন কি না কি ধরে সমুদ্রের
না-জানি-ক্যামন লিকুইডে ভেসে থাকতে হয়! কিছুদিন যাক ভেবে সেদিন পার করে
দিলাম। পরদিন প্রচণ্ড ক্ষুধায় হাউকাউ করে সারাবাড়ি যখন মাথায় তুলে ফেললাম,
তখন দেখলাম আম্মু নিডো’র প্যাকেট আর ফিডার হাতে দাড়ায়ে আছে। মেশানোর পানি
নাই। বিষণ্ণ মুখে বললো, “আগামী পঞ্চাশ বছরে বাংলাদেশ পুরোটাই মরুভূমি হয়ে
যাবে, ছেলেটা কোথায় যে গোসল করবে!”। আ মর! আব্বুর থেকে কি শুনলাম আর আম্মু
কি বলে! শেষমেশ মিনারেল ওয়াটারে গোলানো নিডো খেয়ে চুপ মারলাম। পরদিন, মানে
তৃতীয়দিন পত্রিকা খুলে দেখি বিশাল হেডলাইন, সেখানে লিখা “গ্রীন হাউজ
ইফেক্টের কারনে উষ্ণতা বাড়ায় হিমালয়ের বরফ গলা পানিতে নদীগুলো একদম সাগর
হয়ে গেছে”। মনে পরে গ্যালো প্রথমদিন আব্বুর মুখে শোনা
“দেশ-অর্ধেক-সাগর-ডুব” শব্দগুলো। প্ল্যান করলাম পরদিন সাগর সাইজের নদী
ভ্রমণে যাবো। “মিনারেল দুধ” খেয়ে ঘুমিয়ে গেলাম। চতুর্থদিন সকালবেলা লাইফ
জ্যাকেট, অক্সিজেন সিলিন্ডার, রাবারের নৌকা নিয়ে বের হলাম নদী ভ্রমণের
উদ্দেশ্যে। আম্মু-আব্বু-পত্রিকা আমাকে যতটুকু অবাক করেছিলো, এবার তার নয়গুণ
অবাক হলাম। নদীতে এক ফোঁটাও পানি নাই!
বাস্তবের
সাথে উপরের প্যাঁচালের মিল-অমিল থাকতেই পারে। এবার বাস্তবে আসা যাক।
রাজনীতি নিয়ে আমার কনফিউশনের কথা আগে লিখেছিলাম। আরো কিছু বলি।
কিছুদিন
আগে বিদেশী একটা জরিপকারী প্রতিষ্ঠান দাবী করেছে শেখ হাসিনা সরকারের উপর
শতকরা সাতাত্তর ভাগ মানুষের আস্থা আছে। আশাবাদীদের কাছে এটা নিশ্চয়ই
সুসংবাদ। নিরাশবাদীরা বলতে পারেন সরকার এখনো তেইশ ভাগ মানুষের আস্থা অর্জন
করতে পারে নাই। কনফিউশনবাদীদের কাছে কিন্তু এই ব্যাপারটা বেশ গোলমেলে।
ক্যানোনা বিগত সাংসদ নির্বাচনে বর্তমান সরকারীদল শতকরা প্রায় পঞ্চান্ন ভাগ
ভোট পেয়েছিলো (সঠিক হিসাবটা মনে পরছে না)। আরেকটা বিদেশী সংস্থার দাবী
জামায়াতের প্রতি বাংলাদেশের পঁচিশ ভাগ মানুষের সমর্থন আছে। আওয়ামীলীগ আর
জামাতকে উত্তর-দক্ষিন মেরুর সাথে তুলনা করা যায়। তাহলে হিসাবটা দাড়ায়
মোটামুটি পয়ত্রিশ ভাগ মানুষ আওয়ামীলীগের ঘোর বিরোধী। তাহলে অক্ষমতার
(গ্যাস-বিদ্যুৎ, গুপ্তহত্যা, যুদ্ধাপরাধ, যানজট) দুই বছর পার করার পর
সাতাত্তর ভাগ মানুষের আস্থা দাবী করা কতটা গ্রহনযোগ্য? সরকার নিজেও বলতে
পারবে না।
বেশ
কিছুদিন ধরে শুনছি জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা গুয়াজম ভাষাসৈনিক ছিলেন। তিনি
নাকি বায়ান্ন’র বাংলা ভাষা আন্দোলনের সাথেও যুক্ত ছিলেন। একটা পাকি জারজ
বাংলা ভাষার জন্য আন্দোলন করেছে এটা শুনে রফিক, সফিক, জব্বার’রাও নিশ্চয়ই
কনফিউশনে পরেছেন।
সময়টা
এখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের। ইতোমধ্যেই সাকাচৌ, গুয়াজম, নিজামী, সাইদিকে
গ্রেফতার করা হয়েছে। টাইম-টেবল মেইন্টেইন করে ডিম থেরাপিও দেয়া হচ্ছে। ভালো
ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে মিরপুর চিড়িয়াখানা থেকে আনা উটপাখির ডিম প্রয়োগ করে।
উটপাখির সেরা ডিমটা দেয়ার ফলে সাইদি’র যা কষ্ট হয়েছে তা দেখে উনার আইনজীবীও
চোখে পাখি দেখছে। সাইদি’র সাথে শলাপরামর্শ করে আদালতে দাবী করা হয়েছে
একাত্তরে সাইদি’র বয়স ছিলো মাত্র বারো। বারো বছর বয়সী একটা নাদান ছেলের
পক্ষে পাকসেনাদের গেলমানগিরি করা সম্ভব কিনা তা জানতে চেয়েছেন ঐ আইনজীবী।
এই ব্যাপারটা স্বয়ং আদালতের কাছেও কনফিউজিং। একাত্তরে যদি সাইদি’র বয়স বারো
বছর হয় তাহলে হিসাব করে দেখা যায় সাইদি’র সদ্য মৃত্যুবরণ করা ছেলের জন্ম
হয়েছিলো সাইদি যখন এগারো বছরের বাচ্চা গেলমান ছিলেন। আমার খুব জানতে ইচ্ছা
করছে সাইদিপূত্র নিজের পিতৃপরিচয় নিয়ে কনফিউশনে আছেন কিনা!