ইনোসেন্স অব মুসলিমস
কাফি রশিদ, ১৩/৯/১২
কাফি রশিদ, ১৩/৯/১২
সম্প্রতি
লিবিয়ায় আমেরিকান রাষ্ট্রদূত সহ আরো তিনজন কূটনীতিক নিহত হওয়া ও মিশরে
সংঘাতের পিছনে যেই কারনটা ছিলো সেইটা সবারই মোটামুটি জানা। মুহম্মদকে নিয়ে
সিনেমা বানানোর পিছনে নিঃসন্দেহে তাদের ইসলাম বিরোধী চিন্তাভাবনা কাজ
করেছিলো, সাম্প্রদায়িক সংঘাতের বিষয়টা মাথায় রেখেই তারা সিনেমার
ট্রেইলার ছাড়ে। মুহম্মদের কার্টুন, পোট্রেইট, মূর্তি ইত্যাদি নিয়ে
প্রায়ই ইহূদি-খৃস্টানদের সাথে মুসলিমদের বিরোধ লেগেই থাকে, সেখানে
মুহম্মদকে নিয়ে সিনেমা বানানো তাদের প্রচন্ড সাম্প্রদায়িক ও চরমপন্থী
মনোভাবটাই ফুটে উঠে। আরেকটি ব্যপার হলো সিনেমাটির প্রচারের দায়িত্বে ছিলেন
টেরি জোন্স।
আসলেই
কি সিনেমাটিতে মুসলিমদের "ইনোসেন্স" দেখানো হয়েছে? মুসলিম বলতে তারা
কিন্তু বিন লাদেন টাইপের মানুষ ধরে নিয়েই সিনেমা তৈরিতে লেগেছিলো।
সিনেমাটির পূর্বনাম ছিলো "ডেজার্ট ওয়ারিয়র্স", এরপর "ইনোসেন্স অব বিন
লাদেন"। তো বোঝাই যাচ্ছে তারা নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী নিয়েই সিনেমা তৈরী
করছিলো। ৫৬ বছর বয়সী রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী "স্যাম ব্যাসিল" এর
নাগরিকত্ব নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কেউ কেউ তাকে ইসরায়েলী নাগরিক বললেও তার
স্বপক্ষে ইসরায়েলী কোন ডকুমেন্ট পাওয়া যায়নি। হলিউড ফিল্ম রিপোর্টে
স্যাম ব্যাসিলকে নন-প্রফেশনাল মুভি মেকার হিশেবে বলা হয়েছে, যিনি প্রায়
একশ ইহূদীর থেকে প্রায় ৫ মিলিয়ন ডলার আর্থিক অনুদান নিয়ে সিনেমাটি তৈরি
করছিলেন।
সিনেমার
আশিজন ক্রু দাবী করেছেন তাদের সিনেমার বিষয়বস্তু সম্পর্কে ভুল ধারণা
দেয়া হয়েছে। তারা সাম্প্রতিক ঘটনার জন্য যথেষ্টই অনুতপ্ত। সিন্ডি লি
গার্সিয়া, যার মুহম্মদের হবু স্ত্রীর মা চরিত্রে অভিনয় করার কথা ছিলো,
তিনি জানিয়েছেন স্যাম তাদেরকে বলেছিলো সিনেমার বিষয়বস্তু ২০০০ বছর আগেকার
প্রাচীন মিশরীয় পটভূমি। আর সিনেমার সেটে মুহম্মদকে মিস্টার জর্জ বলা
হয়েছে। সিন্ডি আরো জানায় স্যাম নিজেকে মিশরীয় দাবী করেছিলেন। সিন্ডি
স্যামের বিরুদ্ধে মামলা করবেন বলেও জানায়। ২০০০ বছর আগের মিশরীয় পটভূমির
উপর সিনেমার তৈরীর কথা বলে স্যাম ওভার ডাবিং করে মুহম্মদের জীবনকাহিনীর রুপ
দেয়ার চেষ্টা করে। সিনেমার পরামর্শদাতা স্টিভ ক্লেইন জানান "স্যাম
ব্যাসিল" পরিচালকের আসল নাম না, তিনি আগেই স্যামকে সাবধান করেছিলেন ভ্যান
গগের কথা স্মরন করে দিয়ে, মুসলিমদের নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক সিনেমা তৈরি করায়
যাকে হত্যা করা হয়েছিল।
সিনেমাটি
প্রচারের দায়িত্বে ছিলেন টেরি জোন্স, কিছুদিন আগে কোরআন পোড়ানোর
সিদ্ধান্ত নিয়ে হৈচৈ ফেলে দিয়েছিলেন যিনি। আমেরিকার ফ্লোরিডার একটি
চার্চে সিনেমাটির ট্রেইলার চলাকালীন সময়ে বলেছেন সিনেমাটিকে মুসলিমদের
আঘাত করতে তৈরী করা হয়নি, তাদের ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ ও মুহম্মদের নিন্দিত
ব্যক্তিগত জীবনকে প্রাধান্য দেয়াই ছিলো মূল উদ্দেশ্য। সিনেমাটিতে
মুহম্মদকে একজন শিশু যৌননিপীড়ক, হোমোসেক্সুয়াল পারসোনালিটি সম্পন্ন
ব্যক্তি হিশেবে দেখানো হয়েছে, কিছু কিছু দৃশ্যে মুহম্মদের সেক্সুয়াল
দৃশ্যও ধারণ করা হয়। আরেকটি দৃশ্যে দেখানো হয় মুহম্মদ একটি গাধাকে প্রথম
মুসলিম প্রানী হিশেবে অভিহিত করছে, যার পেছনে স্বল্পবসনা এক তরুণীও ছিলো।
মুহম্মদকে ভন্ড ও মানসিকভাবে অসুস্থ বলে দেখানো হয় সিনেমাটির ১৩ মিনিটের
ট্রেইলারে। মূলত ট্রেইলারে দেখানো এইসব দৃশ্যই সংঘাত সৃষ্টি করে। স্যাম
ব্যাসিল বর্তমানে পলাতক, তবে তিনি আমেরিকান কূটনীতিকদের মৃত্যুতে শোক
প্রকাশ করলেও তাদের মৃত্যুর পিছনে কনস্যুলেটের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে দায়ী
করেছেন।
লিবিয়ায়
আমেরিকান কনস্যুলেটে যে হামলা হলো আসলেই কি তা করা উচিত হয়েছে? হামলার
পিছনে কী "ইনোসেন্স অব মুসলিমস"? লক্ষ্যণীয়, সিনেমাটির ট্রেইলার আমেরিকার
কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে প্রচারিত হলেও মঞ্চ প্রায় ফাঁকা ছিলো। মিশর আর
লিবিয়াতেই ক্যানো তা প্রদর্শিত হলো তা নিয়েও প্রশ্ন উঠে। এই বছরের নাইন
ইলেভেনের পরপরই এই ধরনের হত্যা নিশ্চয়ই বড় ধরণের সমস্যা সৃষ্টি করবে।
আমেরিকান কর্মকর্তারা কিন্তু এই ঘটনাকে শ্রেফ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হিশেবে
দেখছে না। তাদের দাবী লিবিয়ান চরমপন্থী সংস্থা আনসার আল শরীয়া'র এই হামলা
চালানোর পিছনে মুহম্মদের ভিডিওটি ব্যবহার করেছে শুধু জনসমর্থন পাওয়ার
জন্য। পিছনে তাদের বড়োসড়ো পরিকল্পনাও আছে। ইতোমধ্যেই ওয়াশিংটন ঐ অঞ্চলের
নিরাপত্তার জন্য দুইটি যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়েছে। "ইনোসেন্স অব মুসলিমস" কে
কেন্দ্র করে মার্কিন কনস্যুলেটে হামলা লিবিয়ান ও মিশরীয় চরমপন্থীদের গোপন
কোন পরিকল্পনার অংশ, নাকি নিরাপত্তাহীনতার অজুহাত দেখিয়ে সদ্য আরব
বসন্তের ফসল গনতান্ত্রিক লিবিয়া ও মিশরে আমেরিকার ঢুকে পড়ার কৌশল?