দূর্ধর্ষ নিহা'র প্রেমানুভূতি চিপ চুরি [পরীক্ষামূলক সায়েন্স ফিকশন-কাম-লুতুপুতু গল্প]

দূর্ধর্ষ নিহা'র প্রেমানুভূতি চিপ চুরি [পরীক্ষামূলক সায়েন্স ফিকশন-কাম-লুতুপুতু গল্প]
কাফি রশিদ, ৩০/১১/১২

হিজিবিজি কী-সব লেখা দ্বিমাত্রিক নাশপতি আকৃতির বক্স থেকে ইলেক্ট্রনিক চিপ-টা চুরি করার আগপর্যন্ত আমি দুঃস্বপ্নেও কল্পনা করিনি কতোটা ভয়ানক আর রোমাঞ্চকর পরিস্থিতিতে পড়তে যাচ্ছি। গত মৌসুমে সামরিক কারখানা থেকে অদৃশ্য-হওয়ার-চাদর পর্যন্ত চুরির রেকর্ড আছে আমার, তখনও এরকম রোমাঞ্চ অনুভব করিনি। অবশ্য এরকম কিছু ঘটতে পারে ভেবেই চুরির সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম নতুন ধরণের অনুভূতি লাভের আশায়। বেশ কিছুদিন আগে হঠাৎ করে প্রাচীন ইতিহাসের উপর আগ্রহ জন্মালে গত হপ্তায় মিউজিয়মে প্রাচীনকালের চুরিবিদ্যার উপর মাইক্রোফিল্ম খুঁজতে গিয়ে আবিষ্কার করলাম একটা বইয়ের মাইক্রোফিল্ম, 'করেছো মন চুরি' ধরণের কিছু একটা নাম ছিলো। আমি ভেবেছিলাম মন চুরি'র উপায় নিয়ে প্রাচীনকালের কোন হাঁদা লেখকের নষ্ট করা পেইজগুলোর সংকলন ওটা। নাহ, আদ্যিকালের বিদঘুটে আর হাস্যকর ধরণের প্রেমকাহিনী ছিলো বইয়ের বিষয়বস্তু।

যদিও অ্যাখন সেই ম্যাড়ম্যাড়ে ধরণের প্রেমের অস্তিত্ব নেই, দুইজনের দুইজনকে পছন্দ হলে তাদের প্রেমানুভূতি সংরক্ষণ করা ক্ষুদ্রাকৃতির চিপগুলো অদলবদল করে তাদের হাতে প্রবেশ করালেই হয়। 'ছ্যাকা খাওয়া' ধরণের কোন ঝুকি নেই। অবশ্য সবাই যে চিপ প্রবেশ করায় তা কিন্তু না, বেশিরভাগই অহেতুক একটা অনুভূতি লাভ আর হাতে নতুন একটা চিপ প্রবেশ করানো পছন্দ করে না। মানুষের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য যে কয়টি অ-দরকারী অনুভূতি তাদের সিন্যাপস থেকে জন্মের পরপরই আলাদা করে চিপে পুরে রাখা হয় সেগুলোর মধ্যেও সবচে কম দরকারী অনুভূতিটা হলো প্রেমানুভূতি। এরপরই সহানুভূতি, মায়া, লজ্জা সহ আরো কিছু অনুভূতি আছে। দ্বিমাত্রিক নাশপতি আকৃতির বক্স থেকে চুরি করা চিপটা ছিলো এক দূর্ধর্ষ মেয়ের (যার নাম নিহা) প্রেমানুভূতি।

ভয়ংকর দূর্ধর্ষ মেয়ে, আমাদের ডর্মের একমাত্র বিজ্ঞান আকাদেমি'র সদস্য আর কেন্দ্রীয় সামরিক আকাদেমির মহাকাশ কোরের ইন্টার্ন। মেয়েটাকে প্রথম থেকেই দেখছি ক্যামন দার্শনিক আর বিজ্ঞানী ধরণের। সম্ভবত প্রাইমারী লেভেল শেষ করে সহানুভূতি আর মায়া'র চিপ হাতে ইন্সটল করে নিয়েছে। তা না হলে আমার মতো অসময়েই উজবুক আর চোর হতো। প্রায়ই স্বেচ্ছাসেবক হিশেবে ওকে সিটি কাউন্সিলের প্রোগ্রামে দ্যাখা যায়। আমার প্রতি ওর কোন আগ্রহ আছে কিনা জানি না, ক্যামন নিস্পৃহ চোখে তাকায়। বই পড়ে জেনেছি প্রাচীনকালে মানুষ ভাবতো প্রেমানুভূতি থাকে মানুষের নাশপতি আকৃতির হৃৎপিন্ডে, তারা দ্বিমাত্রিক নাশপতি এঁকে সেটাকে ভালোবাসার প্রতীক বলতো। দূর্ধর্ষ মেয়েটা সম্ভবত সেই কথা মনে করেই দ্বিমাত্রিক নাশপতি আকৃতির চ্যাপ্টা বক্সে চিপটা রেখে দিয়েছে।

বলতে অ্যাখন একটু লজ্জাই লাগছে। হাঁদা লেখকের ফিল্মটা পড়ে ইচ্ছা করছিলো আমার চিপটাও অদলবদল করি। কিন্তু সমস্যা হলো গিয়ে আমি অদরকারী প্রায় সবগুলো অনুভূতিই হাতে নিয়ে নিয়েছি, যার কারণে অন্যদের চেয়ে শুধু যে কম কর্মক্ষম আর কম ক্ষিপ্র আর অতিরিক্ত উজবুক ধরণের হয়েছি তা না, রেপুটেশনও অন্যদের চেয়ে কমে গেছে। তাই আমার অতি পছন্দের দূর্ধর্ষ মেয়েটা আমার কপালে ছিলো না, চিপ চুরি করতেই হলো। চুরি করার প্ল্যান অবশ্য ছিলো না। সেদিন একটু বেশি রাতে বুড়ো সিকিউরিটি গার্ডটার হাউকাউয়ের কথা মাথায় রেখে গত মৌসুমে চুরি করা চাদরটায় শরীর মুড়ে ডর্ম থেকে বেড়িয়ে যাচ্ছিলাম। যাওয়ার আগে দূর্ধর্ষ নিহা'র জানালায় উঁকি মেরে যাই। যদিও এই সময়টাতে নিহা কখনোই জেগে থাকে না। সেদিন দেখলাম ও না ঘুমিয়ে জানালার ধারে বেডের উপর বসে নাশপতি আকৃতির বক্সে কী য্যানো আঁকিবুকি করছে। ওর উপর তো আগ্রহ আগে থেকেই, তাই একটু বেশি বেশি কৌতুহল হলো অ্যাতো রাত জেগে আঁকিবুকি করা বক্সটা দ্যাখার। চাইলে তো আর দ্যাখাবে না, তাই চুরি করে দ্যাখাটাই ভালো মনে করলাম।

আর্কেড থেকে অন্যান্য চোর বন্ধুদের সাথে 'গ্র্যান্ড থেফট অটো ইনফিনিটি ভার্শন ৮.৯৩' খেলে ফিরে আসার সময় আবারও উঁকি মেরে দেখি নিহা ঘুমাচ্ছে, তাড়াতাড়ি ডর্মে ঢুকে মেয়েদের এরিয়া'র দেয়াল টপকে জানালা দিয়ে হাত ঢুকিয়ে বক্সটা বের করে আনলাম। হিজিবিজি আঁকিবুকির কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। বক্স খুলতেই আমার নাশপতি আকৃতির হৃৎপিন্ডটা দ্রিম দ্রিম শব্দ করে বাজতে শুরু করলো। প্রেমানুভূতি চিপটা কেউ অ্যামন যত্ন করে বক্সে পুরে সাথে নিয়ে ঘুমায়? ও কারো সাথে অদলবদল করতে যাচ্ছিলো কিনা ভাবতে ভাবতে পকেট থেকে আমার 'পিকলু ২৫০৩এন' লেখা চিপটা বের করে বক্সে রেখে ওর 'নিহা ২৯০১এস' লেখা চিপটা সাথে নিয়ে টুপ করে কেটে পরলাম।