প্রসঙ্গ : প্রকৃত মুক্তমনা অবিশ্বাসী ও ধর্মবিদ্বেষী অবিশ্বাসী

প্রসঙ্গ : প্রকৃত মুক্তমনা অবিশ্বাসী ও ধর্মবিদ্বেষী অবিশ্বাসী
কাফি রশিদ, ১৮/৯/১২

বর্তমান যুগে যেই সকল মুক্তমনা দাবীদার অবিশ্বাসীদের দেখা পাওয়া যায় তাহাদের অনেকে কেবল নামেই মুক্তমনা, আদতে তাহারা চরম সাম্প্রদায়িক মনোভাব সম্পন্ন ব্যক্তি। তাহারা তাহাদের অবিশ্বাস প্রচারের নামে ধর্মীয় পুস্তকসমূহের, ধর্মীয় রীতিনীতির বিষোদগার করিয়া বেড়ায়, ধর্মসমূহের মহাপুরুষদের ফুটো খুঁজিয়া বেড়ায়। এইসকল কাজকর্মে করিয়া ব্যপক পরিচিতি পাইয়া তাহারা আত্মতৃপ্তি লাভ করিলেও অর্জনের খাতা শূন্যই থাকে। তাহারা বল
িয়া বেড়ায় বিশ্বাসী ব্যক্তিদের বিশ্বাস নামক অন্ধবিশ্বাস দূর করিতে তাহাদের মতবাদ প্রচার করিয়া বেড়ায়; অথচ ইহাতে বিশ্বাসীদের অন্ধবিশ্বাস দূর হওয়া তো দূরে থাক, অবিশ্বাসীদের সম্পর্কে একটা বাজে ধারণা ধারণ করিয়া বসে। মূলত এই ধরণের ব্যক্তিদের কারনে বিশ্বাসীদের অন্ধবিশ্বাস দূর করা অনেক কঠিনসাধ্য ব্যপার হইয়া উঠিয়াছে। তাহাদের কৃতকর্মের কারনে বিশ্বাসীদের মনে সৃষ্ট বাজে ধারণা অতি অল্প সংখ্যক সত্যিকারের অবিশ্বাস প্রচারকারীদের ক্রমাগত সমস্যায় ফেলিতেছে।

তাহাদের যদি অবিশ্বাস প্রচারের, অন্ধবিশ্বাস দূরিকরণে সত্যিকারের উৎসাহ থাকিয়া থাকে তাহলে বিশ্বাসীদের সাথে মিশিতে হইবে, বিশ্বাসীদের বিশ্বাসের বিপক্ষে যুক্তি দেখাইতে হইবে। ধর্মীয় পুস্তকসমূহের ভুলভ্রান্তি চিহ্নিত করিয়া তাহা খারিজ করিয়া দেয়ার উৎসাহ সৃষ্টি করিতে হইবে। গুটিকয়েক বিশ্বাসীর অপকর্মকে উদাহারন হিশেবে দেখাইয়া তাহাদের অন্ধবিশ্বাস গুড়াইয়া দেওয়া সম্ভব নহে। বিশ্বাসীদের ধর্মানুভূতিতে আঘাত করিয়া ঠাট্টা মশকরা করা মুক্তমনা অবিশ্বাসীর কর্ম নহে। মুক্তমনা অবিশ্বাসীদের আরো দায়িত্ববান হইতে হইবে, যুক্তিতর্কের মাধ্যমে তাহাদের বক্তব্যের প্রচার ঘটাইতে হইবে।

অনেক অবিশ্বাসীর প্রধান কাজ হইয়া দাড়াইয়াছে ধর্মীয় পুস্তকসমূহের বিভিন্ন বাণী লইয়া বিদ্রুপাত্মক বক্তব্য প্রদান, ধর্মীয় মহা পুরুষদের ব্যক্তিগত জীবন লইয়া টানাটানি, এক ধর্মকে আরেক ধর্মের সাথে তূলনা, ধর্মীয় পুস্তকসমূহের অবমাননা করিয়া বিশ্বাসীদের ধর্মানুভূতি লইয়া টানা হেচড়া করা। এইসকল কাজকর্ম তাহাদের উস্কানী দেয় মাত্র। যুক্তিসঙ্গত আলাপ আলোচনা ব্যতিত কোনরুপ বিরোধিতাই ফলপ্রসু নহে। যাহারা এইসকল উস্কানিমূলক কর্ম করিয়া বেড়ায়, তাহারা ধর্মবিদ্বেষী মাত্র, প্রকৃত অর্থে মুক্তমনা অবিশ্বাসী নহে।

এই কথিত মুক্তমনারা আক্রমনাত্মক বিশ্বাসীদের মতোই অক্রমনাত্মক। সাম্প্রদায়িক বিশ্বাসীদের মতোই সাম্প্রদায়িক। বিশ্বাসীদের ধর্মের মতো ইহাদেরও ধর্ম আছে, বিদ্বেষ-ধর্ম। সুযোগসন্ধানী ধর্মযাজকদের মতো ইহারাও বিদেশগমনের সুযোগ সন্ধান করিয়া বেড়ায়। অবিশ্বাসীদের প্রতি আবার বিশ্বাসীদের দৃষ্টিভঙ্গীর পার্থক্য রইয়াছে। উদাহারনস্বরুপ এই বঙ্গদেশের কথা চিন্তা করা যাক, এইখানে ইসলাম সংখ্যাগরিষ্ঠের ধর্ম হওয়ায় অন্য ধর্মের ধর্মত্যাগকারীকে মুসলমানেরা অবিশ্বাসী বলিয়া মানিয়া লইতে চায় না। ফলে সাধারণের নিকট অবিশ্বাসী ব্যক্তিটি সুযোগসন্ধানী, ধর্ম বিনষ্টকারী, গোপন কোন উদ্দেশ্যধারী বলিয়া গন্য হয়। অবিশ্বাসী ব্যক্তিটির ইসলাম সম্পর্কে সাধারণ মন্তব্যও অতি-আক্রমনাত্মক হইয়া মুসলমানের নিকট ধরা দেয়।

কাজেই বিদ্বেষ, ক্রোধ, ব্যক্তি আক্রমন, কচলাকচলি ত্যাগ করিয়া যুক্তি দেখাইয়া তাদের অন্ধবিশ্বাসে ফাটল ধরাইতে হইবে। যুক্তির উত্তরে যুক্তিই কেবল গ্রহনযোগ্য হইবে, শারীরিক আক্রমন নিষিদ্ধ। শারীরিক আক্রমন যুদ্ধক্ষেত্রের বিষয়, যুক্তিতর্কের সহিত এর কোন স্থান নাই। ঠাট্টা মশকরা প্রকৃত মুক্তমনার পরিচায়ক নহে। লক্ষ্যণীয়, যুক্তির নিকট বিশ্বাস টিকে না, বিশ্বাসীরা পালাইয়া যায়। পলায়নপর ব্যক্তিদের আক্রমন করার প্রয়োজন নাই।