কোরবানি ঈদের আগমুহুর্তে কিছু শুনিয়া-হওয়া-নাস্তিকের বিলাপ

কোরবানি ঈদের আগমুহুর্তে কিছু শুনিয়া-হওয়া-নাস্তিকের বিলাপ

কাফি রশিদ, ২০/১০/১২

কোরবানি ঈদ আসিলেই নিরীহ গরু-ছাগল হত্যার বিরুদ্ধে এক শ্রেণীর শুনিয়া-হওয়া-নাস্তিকগণের মায়াকান্না চক্ষুগোচর হয়। তাহাদের একমাত্র যুক্তি হইলো গরু-ছাগলের স্বীয় ইচ্ছায় যেহেতু কোরবানি দেওয়া হইতেছে না, তাই এই ব্যপারটা চরম অমানবিক কর্ম হইয়া দাড়ায়। কোরবানির মূল উদ্দেশ্যও ইহাতে ব্যহত হয়, কেননা নিজের কাছে সবচাইতে যা দামী তাহাই কোরবানি করিবার কথা ছিলো, অথচ কোরবানি করা হইতেছে টাকার বিনিময়ে কেনা কিছু অবলা পশু। কাজেই কোরবানি দেওয়া যাইবে না।

এই শুনিয়া-হওয়া-নাস্তিকদের আমি বলদ বলিয়া গণ্য করি এবং এই বলদদের ধরিয়া ধরিয়া কোরবানি দেওয়ার জন্য মুমিন্সদের প্রতি আহবান জানাই। ইহার কারণ হইলো নাস্তিকেরা "ঈশ্বর বলিয়া কেউ নাই, কাজেই তাহার উদ্দেশ্যে পশু বলি দেওয়া অনর্থক" - এই কথা যৌক্তিকভাবে প্রচার না করিয়া যখন পরোক্ষভাবে আস্তিকদের বিশ্বাসে ঢুকিয়া পরে এবং তাহাদের মধ্যকার একজন হইয়া দাবী করে আব্রাহামিক এই প্রথা চরম অমানবিক ও লক্ষ্যভ্রষ্ট, আবার কোরবানি যখন মুমিন্সদের মুমিনত্ব টিকাইয়া রাখিবার অন্যতম স্তম্ভ, তখন এই নাস্তিকগণকে বলদ না বলিয়া উপায় আছে? আরো একটা কারণ হইলো এই শ্রেণীর নাস্তিকেরা দিনে একবার গোমাংশ ও সন্ধ্যায় কেএফসি নামক খাবারের দোকানে বসিয়া মুর্গীর রান চিবাইয়া পরম সুখ অনুভব করে। আমার প্রশ্ন হইলো এই গোমাংশ ও মুর্গীর রান কি আকাশ হইতে পরিয়াছে? নাকি যন্ত্রে তৈয়ার হইয়াছে? অবলা পশুর প্রতি প্রেম প্রদর্শনের পূর্বে অবশ্যই দুপুর বেলার গোমাংশ ও সন্ধ্যাবেলার মুর্গীর রান ত্যাগ করিতে হইবে। ধরিলাম সকল মুমিনবান্দা কোরবানি বন্ধ করিয়া দিলো, হিন্দুরা গোমাংশ ও বৌদ্ধরা সকল প্রকার মাংশ ভক্ষণে সম্মত হইলো। তখন কি ঘটিবে? পশুপ্রেম তখন কোথায় পালাইবে? ঘন ঘন গরু-ছাগল জবাই ভিন্ন অন্য কোন উপায় আছে কি? তখন কী অবলা পশুর প্রতি অবিচার করা হইবে না? প্রতিদিন কত হাজার গরু-ছাগল আপনার পেটকে পুজো দেয় সেই হিশাব কে দেখিবে হে মহান পশুপ্রেমিক?

একজন পূর্নবয়স্ক সামর্থ্যবান ব্যক্তি কোরবানির সময় একটা আস্ত গরু জবাই করিয়া সকলের মাঝে বিলাইয়া দেয়। সেই মাংশ সর্বোচ্চ এক সপ্তাহ খাওয়া যায়। তাহা হইলে এক সপ্তাহ খাওয়া ব্যতিত লাভ থাকিল কী? পশুটা যেহেতু বাড়িতে না পালিয়া টাকা দিয়া অন্যান্য পণ্যের মত কিনিয়া আনা হইতেছে, কাজেই বলা চলে "টাকা" হইলো সর্বাপেক্ষা প্রিয় বস্তু। মুসলিমদের উচিত হইবে পশুর মাংশের পরিবর্তে টাকা বিলাইয়া দেওয়া। যদি পঞ্চাশ লক্ষ গরু কোরবানি করা হয় তাহা হইলে সেই টাকা দিয়া পঞ্চাশ লক্ষ ব্যক্তিকে স্বাবলম্বী করিয়া তোলা যায়। অথবা এক কোটি ছেলেমেয়ের একবছরের শিক্ষার খরচ বহন করা যায়। ধর্মকর্মে একটু পরিবর্তন আনিলে সামগ্রিকভাবে কতটুকু পরিবর্তন আসিবে সেই সম্পর্কে ধর্মীয় মহাপুরুষেরা বরাবরই অজ্ঞ ছিলেন। সামান্য দূরদৃষ্টি সম্পন্ন হইলে তাহারা তাহাদের অন্ধসমর্থকদের কতো যে উপকার করিতে পারিতেন সেইটা যদি একবারও ভাবিতেন!

আমার মতে কোরবানি অনর্থক ও আস্তিকদের সম্পুর্নই লক্ষ্যভ্রষ্ট একটা প্রথা। পশুপ্রেম আমার বিন্দুমাত্র নাই, আমি পশুর মাংশ ছাড়া দিনাতিপাত করিতে পারিব না, কাজেই পশুপ্রেমের অজুহাত দেইখাইয়া কোরবানি বন্ধ করিবার দাবী আমার নিজের কাছেই অযৌক্তিক। তবে কোরবানি যেহেতু অন্য এক পুরুষের স্বপ্নের ফসল, সরাসরি মুহম্মদ প্রবর্তিত কোন রীতিনীতি নয়, তাই বাস্তবতা দেখিয়া এই প্রথা পরিবর্তন করাই ভালো হইবে বলিয়া আমার বিশ্বাস। ইব্রাহিম ইহুদি ও খৃস্ট উভয় ধর্মানুসারীদেরও নবি, তাহারা কোরবানি না করিলে মুসলিমদের কোন দায় পরিয়াছে ইব্রাহিমের স্বপ্ন পালন করিতে?