বনবিবি

বনবিবি

কাফি রশিদ, ২৩/০৪/১৩

বঙ্গের দক্ষিনাঞ্চলে তখন নিষ্ঠুর রাজা দক্ষিন রায়ের রাজত্ব। খোদা চাইলেন প্রতিনিধি পাঠিয়ে দক্ষিন রায়কে শায়েস্তা করবেন, কিন্তু কীভাবে পাঠাবেন ভেবে পাচ্ছেন না। অ্যামনি এক সময় মক্কায় ইব্রাহীম নামক এক সন্তানহীন দরবেশ তার স্ত্রী ফুলবিবির সম্মতি ও বিশেষ শর্তে বিয়ে করেন গুলাল বিবিকে। খোদা গুলাল বিবিকে বেঁছে নিলেন তার প্রতিনিধির জন্মদাত্রী হিশেবে। তবে সামান্য সমস্যা দ্যাখা দিলো, ফুলবিবি'র শর্ত অনুযায়ী গর্ভধারণের পরপরই গুলাল বিবিকে জঙ্গলে একা রেখে আসা হলো। সেখানে জন্ম হলো বনবিবি ও শাহ জঙ্গলির। তাদের দ্যাখাশুনার জন্য খোদা স্বর্গ থেকে চারজন চাকর পাঠালেন।

বনবিবি

সাত বছর পর অনুশোচনায় দগ্ধ হয়ে বনবিবি, শাহ জঙ্গলি আর গুলাল বিবিকে মক্কায় ফিরিয়ে নিয়ে গ্যালেন ইব্রাহীম। একদিন বনবিবি আর শাহ জঙ্গলি নবিজীর মসজিদে প্রার্থনা করছিলেন, তখন খোদা জিব্রাঈলের মাধ্যমে তাদের কাছে বিশেষ এক টুপি পাঠালেন, যা মাথায় পরামাত্র তারা বঙ্গের সুন্দরবন অঞ্চলে পৌঁছুলেন, যেখানে দক্ষিন রায় নিষ্ঠুরতার চরম উদাহারন দ্যাখাচ্ছিলেন। এখানে এসে শাহ জঙ্গলির দেয়া আযান দক্ষিন রায়ের কানে পৌঁছুলে তিনি তার ভাই সনাতন রায়কে পাঠালেন তাদের ঝেটিয়ে বিদায় করতে। তাদের মা নারায়ণী প্রথম প্রথম তাদের নিষেধ করলেও সন্তানদের নিরাপত্তার কথা ভেবে এক দল পিশাচ আর ভূত সাথে নিয়ে বনবিবি আর শাহ জঙ্গলির উপর হামলা চালালেন। অতি অবশ্যই নারায়ণী আর সনাতন হেরে গ্যালেন, সাথে হারালেন তাদের রাজত্বের অর্ধেক অংশ। তারা সুন্দরবনের গভীর জঙ্গলে চলে গ্যালেন। 

সেই থেকে বনবিবি আর শাহ জঙ্গলি হলেন সুন্দরবনের রক্ষাকর্ত্রী-রক্ষাকর্তা। একদিন ধোনা আর মনা নামে দুই ভাই সাত নৌকা নিয়ে সুন্দরবনের গভীর অঞ্চলের উদ্দেশ্যে রউনা করলেন মধু আর মোম সংগ্রহ করতে, সাথে এক বালক দুখী। সেই অঞ্চল ছিলো দক্ষিন রায়ের রাজত্বের অংশ, তার জন্য উপহার না আনায় তারা মোম-মধু পাচ্ছিলো না। একরাতে দক্ষিন রায় ধোনাকে স্বপ্নে দ্যাখা দিলেন, বললেন দুখীকে বলি দিতে হবে। লোভী ধোনা বলি হিশেবে দুখীকে জঙ্গলে বেধে রেখে আসলেন। রউনা দেয়ার আগে দুখীর মা বলেছিলেন বিপদে পরলে সে য্যানো বনবিবিকে স্মরণ করে, দক্ষিন রায় যখন বাঘরুপে আসলেন তখন দুখী মনেপ্রাণে বনবিবিকে ডাকছিলো। বনবিবি তার ডাক শুনে ভাইকে নিয়ে এসে বাঘরুপি দক্ষিন রায়কে পরাস্ত করলেন। তবে তার কোন ক্ষতি না করে বাধ্য করলেন ধোনা, মনা আর দুখীকে সাত নৌকা বোঝাই করে মোম আর মধু দিতে। ফেরার সময় বনবিবি তার পোষা কুমীরকে পাঠালেন তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে। 

এই ঘটনার পর থেকে সুন্দরবন অঞ্চলে বনবিবি'র পূজো শুরু হয়, আর মুসলমানেরা বনবিবিকে পীরানী মেনে ভক্তি করে। সুন্দরবনে মোম-মধু সংগ্রহ করতে গ্যালে অ্যাখনো তাদের পূজো করা হয় বাঘের আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে। তবে খুব বেশিদিন এই প্রথা টিকে থাকবেনা, দক্ষিন রায় রুপী লোভী বাংলাদেশ সরকার আর নারায়ণী রুপী রাক্ষুসে ভারত সরকার রামপাল বিদ্যুৎ প্রজেক্ট শুরু করলে সব বাঘ বাপ বাপ করে পালাবে। হতাশার ব্যাপার, বনবিবি কিংবা শাহ জঙ্গলি অ্যাখনো দ্যাখা দিচ্ছেন না। সুন্দরবন রক্ষায় দুখী'র দলবল অ্যাখনো স্মরণ করে যাচ্ছে বনবিবিকে, সে যখন দ্যাখা দিবে তখন মা মা করে পালাবে সব লোভীর দল।

ছবি : উইকিমিডিয়া কমন্স