প্রসঙ্গ : জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধকরণ

প্রসঙ্গ : জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধকরণ
কাফি রশিদ, ৪/০৩/১৩

শাহবাগ সহ দেশের সবকয়টি গণজাগরণমঞ্চ থেকে দ্রুত জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের দাবী উঠেছে, কিন্তু আমার ধারনা সরকার যদি দুম করে জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করে দেয় তাহলে খুব বেশি লাভ হবে না, কারন নিষিদ্ধের পরেও তারা বিএনপি'র উপর ভর করে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাবে। অর্থনৈতিক উৎস হিশেবে পরিচিত সহযোগী প্রতিষ্ঠানের মালিকানা রাতারাতি পরিবর্তন করে নিজেদের আনট্যাগ করাও তাদের পক্ষে অসম্ভব কিছু না। দেশের মানুষ যেহেতু মানসিকভাবে আওয়ামীলীগ সরকারকে একটানা দুই মেয়াদের সরকারে দেখতে প্রস্তুত না, আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিও সরকারী দলের অল্পকিছু ভুলের কারনে গত মেয়াদের বড়ো ধরণের ভুল করে আসা দলকে ক্ষমতায় নিয়ে আসে। কাজেই জামায়াত-শিবিরের বর্তমান কাজকর্ম ও দলটির নেতাকর্মীদের পরিচয় একদম তৃণমূল পর্যায়ে ছড়িয়ে না দিয়ে, তাদের নেতাদের রাজনৈতিকভাবে অযোগ্য ঘোষণা করে অথবা প্রধান বিরোধীদল হওয়ার মতোন আরেকটি বড়ো রাজনৈতিক দল সৃষ্টি না হলে খুব বেশি লাভ হবে বলে আমি মনে করি না। 

জামায়াত-শিবিরের উচ্চপর্যায়ের কয়েকজন নেতাকে যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসি দেয়ার পরে দলটি অস্তিত্বরক্ষার সমস্যায় পরবে, কিন্তু টু বি অনেস্ট, জামায়াত-শিবিরের মতোন সংগঠিত দলের পক্ষে এই সমস্যা সমাধান কঠিন কিছু না। নিষিদ্ধের মানুষ হয়তো "জামায়াত-শিবির" কে ভোট দিবে না, ভোট দিবে বিএনপি'র আড়ালে থাকা জামায়াত-শিবির নেতাদেরই। আমরা যতোই বলি না ক্যানো বিএনপি জামায়াত-শিবিরকে সমর্থন করে নিজেদের কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকে দিলো, প্র্যাকটিক্যালি বিএনপি'র গোড়া সমর্থক, আওয়ামী বিরোধী সমর্থক ও ভবিষ্যতের নিষিদ্ধ জামায়াত-শিবির সমর্থক মিলিয়ে বড়ো একটা ভোটব্যাংক আছে ক্ষমতায় নিয়ে আসার মতোন। 

অবশ্য আওয়ামী লীগ সরকার জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করবে কিনা সেটা নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে (তারা একবার বলেছিলো জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করতে আপাতত তাদের পরিকল্পনা নেই)। তারা যেভাবে নিষিদ্ধকরণ একবার হাইকোর্ট আরেকবার নির্বাচন কমিশনের উপর চাপিয়ে দিচ্ছে তাতে সন্দেহ থাকাটাই স্বাভাবিক। জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করতে সরকার আন্তরিক হলে সেটা পাঁচ মিনিটেই করে ফেলা সম্ভব, জাতীয় সংসদে তাদের তিন-চতুর্থাংশ আসন আছে। সংসদে বিল উত্থাপন করে পাশ না করেও রাষ্ট্রপতি একটা অধ্যাদেশ জারি করেই জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করতে পারেন। অ্যামনকি বিচার বিভাগ বিশেষ ক্ষমতাবলে অধ্যাদেশ জারি করেও জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করতে পারে। 

সম্প্রতি জাতীয় সংসদে যুদ্ধাপরাধী হিশেবে ব্যক্তির পাশাপাশি সংগঠনকেও বিচারের মুখোমুখি করার জন্য আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন করা হয়েছে। সংশোধনীর ফলে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অবস্থানের কারনে জামায়াত ও ছাত্রসংঘকে (বর্তমান ছাত্রশিবির) ট্রাইব্যুনালে আনা যাবে। সংশোধনীর প্রায় একমাস হয়ে গ্যালো অথচ সরকার এই দুইটি সংগঠনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে মামলাও করছে না। ইতিপূর্বে ট্রাইবুন্যালে প্রসিকিউশন টীমের খামখেয়ালীর কারনে এক যুদ্ধাপরাধী’র মৃত্যুদণ্ড না হয়ে যাবজ্জীবন হয়ে গ্যালো। সরকার চাইলে ট্রাইব্যুনালের রায়ের মাধ্যমেও জামায়াত নিষিদ্ধ করে দিতে পারে।