গত শতাব্দীর শুরুতেও অধিকাংশ মানুষের ধারণা ছিল মহাবিশ্বের আয়তন নির্দিষ্ট, অপরিবর্তনশীল এবং মহাবিশ্বের সকল গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থান একমাত্র আমাদের গ্যালাক্সিতে (নেবুলা)। ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে জ্যোতির্বিজ্ঞানী এডউইন হাবল নীহারিকা পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে আবিষ্কার করেন আমাদের গ্যালাক্সি ছাড়াও মহাবিশ্বে আরও অনেক গ্যালাক্সি আছে (তার এই আবিষ্কারের প্রায় সাত দশক পর মহাবিশ্বের মোট গ্যালাক্সির সংখ্যা প্রায় ১০০ বিলিয়ন বলে ধরা হয়)। বছরখানেক পর মাউন্ট উইলসন অবজারভেটরির ১০০ ইঞ্চি ব্যাসের টেলিস্কোপের সাহায্যে তিনি ‘অ্যান্ড্রোমিডা’ নামক আমাদের নিকটতম গ্যালাক্সির দূরত্ব বের করে পূর্বে নির্ধারিত দূরত্বের সাথে তুলনা করে দ্যাখেন যে সেটি আমাদের গ্যালাক্সি থেকে ক্রমশ দূরে সরে যাচ্ছে। এই ঘটনার পর তিনি তার সহকর্মী মিল্টল হ্যুমাসনের সাথে আরও কিছু গ্যালাক্সি পর্যবেক্ষণ করেন এবং ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে তারা ঘোষণা করেন যে মহাবিশ্ব দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে। মহাবিশ্বের সম্প্রসারণের এই ধারণা থেকে তারা মহাবিশ্বের সব গ্যালাক্সি একসময় একটি বিন্দুতে আবদ্ধ ছিল বলে মতামত দেন। এই ধারণা অবশ্য নতুন নয়, ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে জর্জ ল্যামেত্র প্রস্তাব করেন মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ একটি আদি বিন্দু থেকে শুরু হয়েছিল... 


চন্দ্রবংশীয় রাজা ত্রৈলোক্যচন্দ্রের রাজধানী ছিল চন্দ্রদ্বীপ। তার ছেলে রাজা শ্রীচন্দ্র সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হয়ে রাজ্যের রাজধানী চন্দ্রদ্বীপ থেকে সরিয়ে বিক্রমপুরে নিয়ে আসেন। দশম শতকে তিনি শ্রীহট্ট জয় করেন। আমরা বর্তমানে শ্রীহট্ট বলতে যেই সিলেট বুঝি প্রাচীন বাঙলার শ্রীহট্ট আয়তনে ততোটুকু ছিল না। শ্রীচন্দ্রের রাজত্বকালে শ্রীহট্ট পরিচিত ছিল শ্রীহট্টমণ্ডল নামে পুণ্ড্রবর্ধনের একটি মণ্ডল হিশেবে, আর আয়তনে বিস্তৃত ছিল বর্তমান সিলেট বিভাগ সহ ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ত্রিপুরা’র কিছু অংশ পর্যন্ত। মণ্ডলগুলো কয়েকটি খণ্ডলে বিভক্ত ছিল, কখনো কখনো খণ্ডলে বিভক্ত না হয়ে বিষয়ে বিভক্ত হতো। বঙ্গীয় রাজা শ্রীচন্দ্রের প্রভাব বিস্তারের মতোন ব্রাহ্মণ ও ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতির প্রচলন শ্রীহট্টমণ্ডলে ত্যামন একটা ছিল না, তাই তিনি সেখানে হাজার হাজার ব্রাহ্মণ নিয়ে বিশাল এক উপনিবেশ স্থাপন করেন ব্রাহ্মণ্য ধর্ম ও জ্ঞান-বিজ্ঞান প্রসারের জন্য...  




ডুবে মরে যাওয়া মানুষের তালিকা দীর্ঘ করতে গিয়ে যে দীঘিটি কিংবদন্তীর মর্যাদা পেয়েছিল সে দীঘির পানিতে কৃষ্ণচূড়া গাছটিকে সমূলে ডুবে যেতে দেখে আমরা তরুণেরা কেউ স্মৃতিকাতর হই, কিশোরীদের কেউ মন খারাপ বোধ করে, ঘুড়ি-বালকেরা আনন্দিত হয় এবং আমাদের মধ্যকার সর্বাপেক্ষা বয়স্ক মানুষটির দীর্ঘশ্বাসে মোটাসোটা ঠিকাদার লোকটি অস্বস্তি বোধ করে।

কারণ, আমাদের মনে পড়ে যে ক্লান্তিকর ছয়টি ক্লাস শেষে বাড়ি ফেরার পথে আমরা গাছটির নিচে বসে ফুল চিরে পুংকেশর নিয়ে কাটাকুটি খেলতাম; একদিন জনৈক পাকনা ক্লাসমেট যখন জানায় পুংকেশর হচ্ছে কৃষ্ণচূড়া ফুলের নুনু, তখন আমরা বিব্রত হই এবং গণতান্ত্রিক উপায়ে...

আপনি সমকামী, সর্বকামী, বিষমকামী নাকি নিরামিষ হবেন তা নির্ভর করে আপনার জিন, হরমোন ও পরিবেশের উপর- এখানে আপনার শারীরিক গঠন, রুচি বা ধর্মের কিছু করার নাই। একজন সমকামী ব্যক্তির সমকামী হওয়ার পেছনে তাঁর মস্তিষ্কের গঠন, অ্যামনকি বংশধারারও প্রভাব রয়েছে।

সমকামী প্রবণতার জন্য X ক্রোমোজমের Xq28 নামক ব্যান্ডটিকে দায়ী করা হয়, যেটা কিনা সমকামীদের ক্ষেত্রে X ক্রোমোজমের প্রান্তসীমায় বিন্যস্ত অবস্থায় থাকলেও অন্যদের ক্ষেত্রে বিক্ষিপ্ত অবস্থায় থাকে। কাজেই দ্যাখা যাচ্ছে সমকামী ও বিষমকামীদের ক্রোমোজমের গঠনে পার্থক্য রয়েছে।

মস্তিষ্কের ভেতরে হাইপোথ্যালামাস নামে যে অংশটা আছে...

 




ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণের প্রশ্নে প্রাচীন ভারতবর্ষের ঋষিরা বলেছেন প্রকৃতির মাঝেই তিনি বিদ্যমান- জড় প্রস্তর খন্ড থেকে শুরু করে গাছপালাপশুপাখি সবকিছুতেই তার ছায়া আছে। তাদের এ কথার মর্মার্থ অনুধাবন করতে অক্ষম মানুষের দ্বারা গাছ ও পাথর হয়ে গেছেন ঈশ্বর। কোন কোন ক্ষেত্রে অবশ্য গাছপালা ঈশ্বরের প্রতিনিধিতে পরিণত হয়েছে। বর্তমানকালের মতোন প্রাচীন বাঙলায়ও নারীদের মধ্যে ভোরে উঠে তুলসী, শেওড়া ও বট গাছ পূজার প্রচলন ছিল। গ্রাম-দেবতা’র সাথে গাছপূজা’র ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল, একেকটি গ্রামে যে গাছের নিচে আঞ্চলিক দেবতার পূজা হতো কোন কোন সময় সেই গাছটিরও পূজা করা হতো...

আমরা যেসব সুন্দর সুন্দর অক্ষর বা বর্ণ দিয়ে লেখালেখি করি সেই অক্ষর বা বর্ণ এলো কোথা থেকে? কে তৈরি করেছিলেন এইসব বর্ণ? কতো বছর আগে তিনি এইসব তৈরি করেছিলেন? আমরা এইসব প্রশ্নের সরাসরি কোন উত্তর পাবো না। কেউ লিখে রাখেনি আমাদের প্রাণের বাঙলা বর্ণমালা কে তৈরি করেছিলেন। যদি জানা যেত তাহলে আমরা নিশ্চয়ই তাকে বাঙলা ভাষার দেবতার আসনে বসাতাম। সরাসরি উত্তর না পাওয়া গেলেও ধারণা করা যায় আমাদের বর্ণমালা’র আবিষ্কারকাল, উৎস। আমরা এখন যেরকম দেখি আমাদের বর্ণমালা, ঠিক সেইরকম ছিলো না প্রথম দিকের বর্ণমালা...

 




উনিশ'শ একান্ন-বায়ান্ন সালের দিকে প্রায়ই এক দূর্ধর্ষ চেহারার তরুণ ও এক ছিপছিপে গড়নের কিশোরীকে দ্যাখা যেতো বড়ো সড়কের অদূরে কুঠিবাড়ি'র সিঁথানে শতাব্দী প্রাচীন কোন এক বট অথবা পাকুড় গাছের নিচে। তরুণের হাতে হয়তো দেবীনগর বা নুরুল্লাহপুর মেলা থেকে কেনা লাল রঙের কাঁচের চুড়ি থাকতো অথবা থাকতো না, তবে কিশোরীর হাতে সবসময়ই রঙিন সূতোয় বোনা আগেরবারের'চে ভিন্ন চেহারার হাত-পাখা থাকতো। বট অথবা পাকুড়, যেই গাছের নিচে বসে কিশোরীটি খুঁনসুটিতে মেতে উঠতো অথবা তরুণটি হেঁড়ে গলায়...

হিজিবিজি কি-সব লেখা দ্বিমাত্রিক নাশপতি আকৃতির বক্স থেকে ইলেক্ট্রিক চিপ-টা চুরি করার আগপর্যন্ত আমি দুঃস্বপ্নেও কল্পনা করিনি কতোটা ভয়ানক আর রোমাঞ্চকর পরিস্থিতিতে পড়তে যাচ্ছি। গত মৌসুমে সামরিক কারখানা থেকে অদৃশ্য-হওয়ার-চাদর পর্যন্ত চুরির রেকর্ড আছে আমার, তখনো এরকম রোমাঞ্চ অনুভব করিনি। অবশ্য এরকম কিছু ঘটতে পারে চিন্তা করেই চুরির সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম নতুন একধরণের অনুভূতি লাভের আশায়। বেশ কিছুদিন আগে হঠাৎ করে প্রাচীন ইতিহাসের উপর আগ্রহ জন্মালে গত হপ্তায় মিউজিয়মে প্রাচীনকালের... 

 




অজানাকাল ধরে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের শাসনকর্তা ছিলেন বিশাল বপু ও অবিশ্বাস্য শক্তিধর টাইটানেরা। তারা সংখ্যায় অনেক হলেও সবার নাম জানা যায়না। কয়েকজনের বর্ননা পাওয়া যায় গ্রীক পুরাণ রচয়িতাদের কাব্য থেকে। তাদের মধ্যে সবচে গুরুত্বপূর্ন ছিলেন “ক্রোনাস”, ল্যাটিন ভাষায় যিনি “স্যাটার্ন” নামে পরিচিত। নিজ পুত্র জিউসের হাতে পরাজিত হওয়ার আগপর্যন্ত টাইটানদের শাসন করেছেন তিনি। সেইসব টাইটান ছিলো ক্রোনাসেরই ভাই-বোন, গায়া’র সন্তান। রোমানদের মতে, যখন দেবতা রাজ জিউস আক্রমণ করলেন...

ল্যাবডেকাসের পুত্র লেয়াস ছিলেন থিবীসের রাজা, লেয়াসের স্ত্রী রানী জোকাস্টা। বহুদিন ধরে সন্তান কামনা করছিলেন লেয়াস, সন্তান না হওয়ার কারণ অনুসন্ধানে একদিন গোপনে ডেলফির মন্দিরে গেলেন। দৈববাণী এলো, সন্তান না হওয়াকে অভিশাপ হিশেবে না দেখে আশীর্বাদ হিশেবে দেখা উচিৎ, কারণ সন্তান হলে একদিন সে লেয়াসকে খুন করে জোকাস্টাকে বিয়ে করবে। রাজা লেয়াস এই কথা গোপন রেখে জোকাস্টার থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখলেন...




একজন ধার্মিক ব্যক্তি মাত্রই দাবী করেন ধর্মই সকল নৈতিকতার উৎস, কারণ এই দাবীর উপরই ধর্মের ইইকালীন-পরকালীন প্রয়োজনীয়তা নির্ভর করে। নৈতিকতার উৎস যদি ধর্ম হয় তাহলে একজন ধার্মিকের জীবনে মানুষের তৈরি আইনকানুনের ন্যুনতম প্রভাব নেই, ধর্মের সুরক্ষায় তারা এতে দ্বিমতও করবে না, কারণ তাদের দাবী অনুযায়ী ধর্ম-থেকে-উদ্ভুত-নৈতিকতা ক্ষুদ্রতম জাগতিক অন্যায় থেকেও তাদের বিরত রাখছে। তারা যদি পাপ করে ফেলেন তাহলে রক্ষা নেই, পরকালে তাদের বিচারের সম্মুখীন হতে হবে...

ব্যাপারটা খুবই হাস্যকর যে ইউনাইটেড স্টেটস, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া সহ প্রায় সবকয়টি উন্নত দেশে, এমনকি আফ্রিকার দ্রুত উন্নয়নশীল দেশগুলোতেও সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে বাইবেল ছুঁয়ে শপথ করা হয়। মাঝে মাঝে এইসব দেশের লিড নিউজ হয় কোন এক মুসলিম সিনেটর অথবা পার্লামেন্ট মেম্বার হয়েছেন, এই প্রচার বোঝা যায় তাদের মধ্যেও একধরনের ধর্মীয় প্রেজুডিস কাজ করে। তাদের আমরা উদার জাতি হিশেবে জানি, তারপরেও কোন মুসলিম সিনেটর অথবা এমপি যখন বাইবেলের পরিবর্তে কোরআন ছুঁয়ে...

 



মৈমনসিংহ গীতিকা : চন্দ্রাবতী

বংশীদাসের কন্যা চন্দ্রাবতী একদিন পূজার জন্য ফুল তুলতে গেলে সুন্ধ্যা গ্রামের জয়ানন্দের সাথে দেখা হয়। প্রথমদর্শনেই জয়ানন্দ চন্দ্রাবতীর প্রেমে পড়ে যান এবং প্রেম নিবেদন করে একটি বিদায় পত্র লেখেন। তাদের বাবা-মায়ের সম্মতিতে তাদের বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক হয়। এরইমধ্যে এক মুসলমান তরুণী তাদের মধ্যে ঢুকে পরলে আসন্ন প্রণয়কাব্য করুণ উপাখ্যানে পরিণত হয়। গীতিকাব্যটি রচনা করেছেন নয়ানচাঁদ ঘোষ, আনুমানিক ২৫০ বছর আগে। নেয়া হয়েছে দীনেশচন্দ্র সেন সংকলিত মৈমনসিংহ গীতিকা থেকে। মোট ৩৫৪টি ছত্র আছে এতে, দীনেশচন্দ্র সেন এগুলোকে ১২টি অঙ্কে ভাগ করেছেন...
'ব্রাহ্মণ-রোমান-ক্যাথলিক-সংবাদ' : ছাপাখানায় মুদ্রিত বাঙলা ভাষার প্রথম বই

১৬৬৩ খ্রিষ্টাব্দে ভূষণার বালক রাজপুত্রকে অপহরণ করে মগেরা ক্রীতদাস হিশেবে বিক্রি করতে আরাকান রাজ্যে নিয়ে যায়। আরাকানে পর্তুগীজ ফাদার মানুয়েল রোজারিও টাকার বিনিময়ে রাজপুত্রকে উদ্ধার করে নিজের বাসায় নিয়ে যান। সেখানে তিনি রাজপুত্রকে ধর্মশাস্ত্র শিক্ষাদান শুরু করেন, রাজপুত্র খ্রিষ্টধর্ম শিখছিলেন মনযোগ সহকারে, তবে হিন্দুধর্মে তাঁর অগাধ বিশ্বাসের কারণে ধর্ম ত্যাগে অসম্মতি জানান। বলেন, কেবলমাত্র স্বপ্নে ঈশ্বরের নির্দেশ পেলেই খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করবেন। এক রাতে সেইন্ট আন্তোনিও রাজপুত্রকে স্বপ্নে দেখা দিয়ে ধর্ম ত্যাগ করতে বলেন এবং...